কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনার পরও সুফল নেই

প্রণোদনা প্রদানসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও কৃষিপণ্য রপ্তানিতে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হচ্ছে না বাংলাদেশ। গুণগত মানের পণ্য সংরক্ষণ ও সরবরাহ লাইনে ঘাটতিসহ সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সক্ষমতা না থাকায় রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাচ্ছে কৃষিপণ্য।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী সদ্যোবিদায়ি ২০২২-২৩ অর্থবছরে আগের অর্থবছর (২০২১-২২) থেকে রপ্তানি আয় কম হয়েছে ২৭.৪৭ শতাংশ। এ সময় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩৯ কোটি ৪১ লাখ ডলার।

এ সময় আয় হয়েছে মাত্র ৮৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৯.৫৩ শতাংশ কম। ২০২১-২২ অর্থবছরের আয় ছিল ১১৬ কোটি ডলার। তবে এদিকে চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) আগের অর্থবছর থেকে ৩৩ শতাংশ কমিয়ে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৩.৪৫ কোটি ডলার।

ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সাড়ে ১৪ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময় আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ছয় কোটি ৭৫ লাখ ডলার। আর আয় হয়েছে সাত কোটি ২৫ লাখ ডলার। এর আগের বছর এই সময়ে আয় ছিল ছয় কোটি ৩৩ লাখ ডলার।

এই প্রেক্ষাপটে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কৃষিপণ্য রপ্তানিতে সরকার ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা প্রদানসহ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকলেও এসব পরিকল্পনা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

ফলে অস্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়ায় কৃষিপণ্য উৎপাদন, গুড অ্যাগ্রিকালচার প্র্যাকটিস (গ্যাপ) এবং কীটনাশক সারের ব্যবহার সম্পর্কে কৃষকদের অবহেলার কারণে রপ্তানি আয়ে বড় বাধা। এ জন্য কৃষকরাও কৃষিপণ্য রপ্তানি করে বাড়তি আয়ের যে সুযোগ ছিল সেটা পাচ্ছেন না। একই সঙ্গে বৈদেশিক আয়ের সুযোগ হারাচ্ছে বাংলাদেশ।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও দেশের কৃষিপণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, দেশের রপ্তানিকারকরা বিশ্ববাজারে গুণগত মানের পণ্য নিশ্চিত করতে পারেননি।

এ ছাড়া রপ্তানি পণ্য কোথা থেকে কিভাবে আসে (ট্রেসিবিলিটি) সেটা নিশ্চিত করা যায়নি।  উৎপাদন থেকে রপ্তানি পর্যন্ত পণ্য সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা এবং বিমানবন্দরের পাশে সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে দেশের কৃষিপণ্য রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াবে।

এদিকে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সমস্যা চিহ্নিত করতে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকের উৎপাদনে বেশি লোকসান। প্রয়োজনীয় হিমাগারের অভাবে শুধু আলু সংরক্ষণে হিমাগার থাকলেও অন্য কৃষিপণ্য রাখার মতো কোনো বিনিয়োগ আসেনি এ খাতে।

 

কিছু থাকলেও এতে খুব ‘কম সংরক্ষণ করা যায়। এ ছাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদনের পর সংরক্ষণ করতে গিয়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে সংরক্ষণব্যবস্থা জোরদার করা গেলে সংরক্ষণের সময় লোকসান ৫ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব।

জানতে চাইলে ফ্রুট অ্যান্ড ভেজিটেবল রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও আধুনিক প্যাকেজিংয়ের দুর্বলতার ফলে অনেক উদ্যোক্তা পণ্য রপ্তানি করতে পারেনি। এ ছাড়া বৈশ্বিক আবহাওয়ার কারণে ক্রেতারা কাছের দেশগুলো থেকে পণ্য আমদানি করেছে। ফলে আমাদের রপ্তানি আয়ে এমন নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

তিনি আরো বলেন, প্রতিযোগী দেশগুলোতে প্যাকেজিংয়ের পাশাপাশি আধুনিক ল্যাবও থাকে। এসব ল্যাবে তাৎক্ষণিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে পণ্য প্যাকিং করা হয়। এ ছাড়া গ্যাপ নীতিমালা থাকলেও বাস্তবায়নে সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা একেবারেই কম। ইউরোপ ও আমেরিকার পণ্য নিতে প্রথম ধাপ হলো গ্যাপ অনুসরণ করা হয়েছে কি না নিশ্চিত করা। এগুলোতে আমাদের বড় দুর্বলতা রয়েছে।

©  2019-2024 All Rights Reserved. Design By Ghost