দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। রবিবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে ২৯৮ আসনে নৌকার চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বিনা ভোটে নির্বাচিত হলে ব্যবস্থা, দলের ডামি প্রার্থী রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
এর আগে রবিবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সাক্ষাৎ করেন। সেখানে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কেউ বিনা ভোটে (প্রতিদ্বন্দ্বিতায়) নির্বাচিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে দলীয় ডামি প্রার্থী রাখার নির্দেশনাও দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
মনোনয়ন প্রত্যাশীর সঙ্গে কথা বলে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম যুগান্তর।
দ্বাদশ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার তাগিদ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ পাশ করে আসতে পারবেন না। অন্য দলের প্রার্থী না থাকলে প্রত্যেক প্রার্থীকেই একজন করে দলীয় ডামি প্রার্থী রাখতে হবে।”
নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে নৌকার প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা অন্যান্য দলের কেউ প্রার্থী হলে তাকেও সহযোগী ও উৎসাহ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রধান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে এক প্রার্থী জানান, দলীয় প্রতীকের প্রার্থীর পাশাপাশি দলের যেকোনো নেতা বা যেকোনো ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবে বলে নির্দেশনা দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
আরেক প্রার্থী জানান, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে প্রয়োজনে ডামি প্রার্থী রাখতে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে নির্বাচনের সময় ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতেও নির্দেশ দেন তিনি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম কেনেন ৩,৩৬২ জন। এর আগে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে ৪,০২৩ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন।
প্রসঙ্গত, সরকার পতনের এক দফা দাবি ও একতরফা তফসিল বাতিলের দাবিতে বিএনপি সমমনা দলগুলোকে নিয়ে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনে রয়েছে। একই সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে ঘটছে নানা নাটকীয়তা। আলোচনায় আসছে ছোট ছোট নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত দলগুলো।
ভোটে যাওয়া নিয়ে দ্বিধায় থাকা জাতীয় পার্টি নির্বাচনের মাঠে পুরো শক্তি নিয়ে সক্রিয় থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ৩ দলের জোট “যুক্তফ্রন্ট”আন্দোলনে “না পেরে” নির্বাচনী মাঠের মোকাবিলার কথা বলেছে। তৃণমূল বিএনপিও বেশ তোড়জোর করছে। এছাড়া নিবন্ধিত ইসলামিক দলের মধ্যে ৭টি দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
এখন ইসিতে নিবন্ধিত দল রয়েছে ৪৪টি। এরমধ্যে বিএনপিসহ ১৮টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিন্ধান্তের কথা জানিয়েছে। তারা তাদের দাবিতে আন্দোলন করে যাবে বলে জানিয়েছে। এছাড়া নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামী, কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে জন্ম নেওয়া নুরুল হক নূরের গণঅধিকার পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে। সব মিলিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কতটি দল অংশ নেয় সেটি জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। ওইদিন মনোনয়ন জমা দেওয়ার নির্ধারিত শেষ সময়।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৯টি দল অংশ নিয়েছিল; ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর হওয়া এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪৮.০৪% ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। এই নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ভোট পায় ৩২.৫০% আর জাতীয় পার্টি পায় ৭.০৪% ভোট।
দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় ১২টি দল। বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মধ্যে এই নির্বাচনে ৭২.১৪% ভোট পেয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। আর সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পক্ষে ৭% ভোটার রায় দেন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় ৩৯টি দল। এই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট পড়ে ৭৬.৮০%, ধানের শীষে ১৩.৫১% আর লাঙ্গলে ৫.৩৭% ভোট পড়ে। পরে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। আর সংসদে প্রধান বিরোধী দল হয় জাতীয় পার্টি।
গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি। ওই দিন সকাল ৮টা থেকে টানা ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর।
মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। সেদিন থেকেই প্রচারণা শুরু করতে পারবেন প্রার্থীরা।